সোমবার ২১ এপ্রিল ২০২৫ - ১৬:৩০
বর্তমান ইরান-আমেরিকা আলোচনা ২০১৫ সালের চুক্তির পুনরাবৃত্তি: ৪টি মূল কারণ

সাইবারনেটিক্স গবেষণা ও আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষক ড. মোহাম্মদ আলী শোকুহিয়ান রাদ একান্ত সাক্ষাৎকারে হাওজা নিউজকে দেওয়া বক্তব্যে সতর্ক করে দিয়েছেন যে, ইরান ও আমেরিকার মধ্যে চলমান আলোচনা ২০১৫ সালের চুক্তির মতোই একটি ব্যর্থ পরিকল্পনার পুনরাবৃত্তি ঘটাচ্ছে।

হাওজা নিউজ এজেন্সি: ড. মোহাম্মদ আলী শোকুহিয়ান রাদের মতে, বর্তমান আলোচনায় অন্তত চারটি দিক থেকে ২০১৫ সালের পরিস্থিতির পুনরাবৃত্তি ঘটছে।

১. মিডিয়া ম্যানিপুলেশনের অভিন্ন কৌশল
এই গবেষক বিশদভাবে ব্যাখ্যা করেন, “২০১৫ সালের চুক্তির সময় আমরা যা দেখেছি, তার সাথে বর্তমান মিডিয়া কভারেজের মিল অত্যন্ত স্পষ্ট। তখনকার মতোই আজকাল প্রধান প্রধান মিডিয়াগুলো আমেরিকার সাথে আলোচনাকে 'একমাত্র সমাধান' হিসেবে উপস্থাপন করছে। আলোচনার সম্ভাব্য ফলাফল নিয়ে অযৌক্তিক আশাবাদ ছড়ানো হচ্ছে, অথচ আমেরিকার খারাপ বিশ্বাসঘাতকতার দীর্ঘ ইতিহাসকে সম্পূর্ণ উপেক্ষা করা হচ্ছে।”

২. আমেরিকার সাথে আলোচনার ব্যর্থ ইতিহাস
শোকুহিয়ান রাদ ইরানের বিপ্লব-পরবর্তী সময় থেকে আমেরিকার সাথে হওয়া ৮টি সরাসরি ও পরোক্ষ আলোচনার উদাহরণ টেনে বলেন, “ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়, আমেরিকার সাথে কোনো আলোচনাই ইরানের জন্য কল্যাণ বয়ে আনেনি। বরং প্রতিবারই আমেরিকা আলোচনার সুযোগকে ইরানের বিরুদ্ধে আরও বেশি নিষেধাজ্ঞা ও চাপ সৃষ্টির হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করেছে। ২০১৫ সালের চুক্তি তার জ্বলন্ত উদাহরণ - যেখানে আমেরিকা কাগজে-কলমে কিছু ছাড় দিলেও বাস্তবে ইরানের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ অব্যাহত রেখেছে।”

৩. সর্বোচ্চ নেতৃত্বের সতর্কবাণী উপেক্ষা
তিনি ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ সাইয়্যেদ আলী খামেনেয়ীর সাম্প্রতিক বক্তব্য উদ্ধৃত করে বলেন, “আমাদের নেতা বারংবার স্পষ্ট ভাষায় সতর্ক করে দিয়েছেন যে আমেরিকার সাথে আলোচনা ইরানের কোনো সমস্যার সমাধান নয়, বরং এটি সমস্যাকে আরও জটিল করবে।’’ অথচ কিছু মহল ইচ্ছাকৃতভাবে নেতার এই স্পষ্ট নির্দেশনা উপেক্ষা করে আলোচনাকে 'অপরিহার্য' হিসেবে প্রচার করছে। এটি একটি সুপরিকল্পিত ষড়যন্ত্র।

৪. রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক প্রভাবের খেলা
তিনি আরও বিশদ বিশ্লেষণে বলেন, আমেরিকা বর্তমানে দুইটি কৌশল প্রয়োগ করছে: প্রথমত, জাতিসংঘের সুরক্ষা পরিষদের ২২৩১ নম্বর প্রস্তাবের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে নতুন কোনো চুক্তির মাধ্যমে ইরানকে বেঁধে ফেলার চেষ্টা। দ্বিতীয়ত, আলোচনার নামে ইরানের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা। আমরা ইতিমধ্যেই দেখতে পাচ্ছি, আলোচনা শুরুর খবরেই বাজারে ডলারের দর অস্বাভাবিকভাবে কমে গেছে - যা একটি পরিকল্পিত অর্থনৈতিক ম্যানিপুলেশন।

সরকার-১৩ এর সাথে বর্তমান অবস্থানের পার্থক্য
শোকুহিয়ান রাদ স্পষ্টভাবে তুলনা করেন, হাসান রুহানির সরকারের (সরকার-১৩) আমলে আমেরিকার সাথে সম্পর্কের ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ ভিন্ন নীতিই অনুসরণ করা হয়েছিল। সে সময় আলোচনাকে কখনই সমস্যার সমাধান হিসেবে দেখা হয়নি, বরং আঞ্চলিক প্রতিরোধ শক্তিকে শক্তিশালী করাই ছিল মূল লক্ষ্য। কিন্তু বর্তমানে আমরা আবারও ২০১৫ সালের সেই পুরনো কৌশলেরই পুনরাবৃত্তি দেখছি।

গুরুত্বপূর্ণ সতর্কবার্তা
তিনি তার বিশ্লেষণ শেষ করে একটি গুরুত্বপূর্ণ সতর্কবার্তা দিয়ে বলেন, “ইরানের শত্রুরা চায় আমরা বারবার একই পাথরে পদাঘাত করি। কিন্তু ইতিহাস থেকে শিক্ষা নিয়ে আমাদের সচেতন হতে হবে। আমেরিকার সাথে কোনো ধরনের আলোচনাই ইরানের স্বার্থ রক্ষা করতে পারবে না। আমাদের আসল শক্তি লুকিয়ে আছে আত্মনির্ভরশীলতা, বৈজ্ঞানিক অগ্রগতি এবং প্রতিরক্ষা শক্তি বৃদ্ধির মধ্যে।”

Tags

আপনার কমেন্ট

You are replying to: .
captcha